আহা! কাকীর দোকান

খন যে কাকীর কথা বলবো তিনি জণগণের কাকী। মিরপুর ২ নম্বরের উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে তিনি দারুণ জনপ্রিয়। কারণ কাকীর কাছে চাইলেই তিনি নির্দ্বিধায় চা,পান, সিগারেট সবই দেন। আহা কি স্নেহময়ী তিনি। ওহ আরো একটা কথা বলা হয়নি। কাকীর দোকান থেকে বাকিতেও খাওয়া যায়। তবে বর্তমানে কাকীর চেয়ে কাকাই বেশি বসেন দোকানে। তবুও দোকানের নাম কাকীর দোকানই আছে।
এবার একটু দোকানের অবস্থানের কথা বলা যাক। ঢাকার মিরপুর দুই নম্বরের “স” নামক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনের এক ছোট্ট গলিতে এই দোকানের অবস্থান। মেইন রাস্তা থেকে বোঝাই যায় না যে ভেতরে এরকম একটা দোকান আছে। কারোরই নিশ্চয় বুঝতে বাকি নেই যে এটি একটি চায়ের দোকান। স্কুল থেকে শুরু করে ওই ভার্সিটির ভাইয়ারাও আসেন এখানে। ৯৯% এর মুখ থেকে ঠোঁট ও হৃদয় পোড়ার ধোঁয়া বের হয়। আহা কাকা-কাকীর কি ব্যবসা।

ঘটনাক্রমে আমিও একবার গিয়েছিলাম স্নেহময়ী কাকীর দোকানে। এর আগে শুধু নামই শুনেছিলাম। আমার একজন বন্ধু আমাকে নিয়ে গেল। কথা ছিল, ওর সাথে গিয়ে চা খেয়ে পরে দুইজন একসাথে মিরপুর ১০ নম্বরের মার্কেটে যাব। তো গেলাম ওর সাথে। গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। আমার ক্লাসের কিছু ছেলে যাদেরকে আমি সবসময় ভালো মনে করতাম তারা বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে। একজন আবার আরেকজন কে বলছে, “দোস্ত তুই কিন্তু বেশী টান দিতেছিস”। পাশে আবার কিছু ভার্সিটির বড় ভাইয়েরাও আছে। তারাও সিগারেট ফুঁকছে। আমার বন্ধু দেখলাম খুব স্মার্ট। কাকাও খুব স্মার্ট। বন্ধুর দুই আঙ্গুলে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিলো। বন্ধু আমার দারুণ ফিলিংস নিয়ে সিগারেট খেলো। কাকী বসা ছিলেন পাশেই। আমার বন্ধু তার প্যান্ট থেকে ১০০ টাকার একটা নোট বের করে দিল কাকীকে। কাকী ওর নামটা একটা খাতায় লিখে নিল। বললাম এটা কিসের টাকা?
বন্ধু বললো কয়েকদিন আগে নাকি কিছু ছেলে এখানে ঝামেলা করে কাকীর দোকানের টুল ভেঙে ফেলেছে। এখন কাকী সবার কাছ থেকে ১০০ করে টাকা নিচ্ছে। পরে চা, সিগারেট খেতে যার যার টাকা কেটে যেতে থাকবে। আহা নিশ্চিত ১০০ টাকার ব্যবসা একজনের কাছ থেকে। বন্ধুর খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হলে আমরা চলে আসলাম। কিন্তু মনে হতে লাগলো প্রতিদিন অনেক ছেলেই আমার মত বন্ধুদের সাথে যায় এখানে। কতজন আর সিগারেট না ছুঁইয়ে থাকতে পারে? ব্যধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়। ওইদিনের পর আর খুব বেশি যাওয়া হয়নি ওদিকে। কিন্তু ভাবি কাকা-কাকীর কথা এরা কীভাবে এই কাজ করতে পারেন? যে যাচ্ছে তার কাছেই সিগারেট চাইলেই দিয়ে দিচ্ছে। তার দোকানে পূর্ণবয়স্ক লোকের চেয়ে টিনেজারদের আধিপত্যই বেশী। বিদ্যালয়ের পোশাক পরেই তারা সিগারেট খাচ্ছে নিয়মিত। খুব কাছেই মিরপুর ২ নম্বর থানা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তো দেখি নাই এ পর্যন্ত।  


ছবিঃ ডেইলি মেইল 

মন্তব্যসমূহ